বাংলাদেশের কৃষির তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস। SOURCE OF AGRICULTURAL INFORMATION AND SERVICE OF BANGLADESH

বাংলাদেশের কৃষির তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎস

SOURCE OF AGRICULTURAL INFORMATION AND SERVICE OF BANGLADESH 

কৃষির খবরা খবর, সংবাদ, নতুন বিষয়, প্রযুক্তি উদ্ভাবন, সম্প্রসারণ বার্তা ইত্যাদি হচ্ছে কৃষিতথ্য বাংলাদেশে কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষি তথ্য ও সেবা অপরিহার্য। কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের কাছে হস্তান্তর, কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও কৃষির প্রচার প্রসার কৃষির অবাধ তথ্য প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। কৃষকের কাছে যত দ্রুত ও সঠিক তথ্য যাবে কৃষি তত সমৃদ্ধ লাভ করবে। অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে ঘরে বসেই মুহূর্তের মধ্যে কৃষক সারা পৃথিবীর কৃষি তথ্য পেতে পারে। যে কোন সমস্যার সমাধান অনলাইনে বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পাওয়া যায়। কৃষির তথ্য ও সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ কৃরছে। কৃষির তথ্য ও সেবা পাওয়ার জন্যে বর্তমানে বহু মাধ্যম রয়েছে ৷ বাংলাদেশে কৃষির তথ্য ও সেবা প্রাপ্তির উৎসগুলো হলো : ১. অভিজ্ঞ কৃষক, ২. কৃষক বিদ্যালয়, ৩. কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠক, ৪, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ৫. কৃষি তথ্য সার্ভিস ও সম্প্রসারণ অফিস, ৬. বেসরকারি সংস্থা, ৭. কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ৮. ইন্টারনেট । এখানে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম বা উৎস বর্ণনা করা হলো ।

অভিজ্ঞ কৃষক (Experienced Farmers )

কৃষির উৎপত্তি ও ইতিহাস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে মানুষের পদচারণার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষ কৃষি উৎপাদন করছে। কৃষকের কৃষি কাজের বাস্তব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান যুগ যুগ ধরে বংশ পরষ্পরায় স্থানান্তর হয়ে আজ পর্যন্ত এসেছে।

কৃষক মারা যায় কিন্তু তার জ্ঞান ও তথ্য রেখে যান কৃষক থেকে কৃষক, দাদা থেকে বাবা, বাবা থেকে ছেলে, ছেলে থেকে নাতি পুতিতে কৃষকের অসীম জ্ঞান স্থানান্তর হয় । কৃষক ফসল, মাছ, গবাদিপশু, হাঁস- মুরগি উৎপাদন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। হাতের কাছে কাউকে না পেয়ে নিজেই চিন্তা, অনানুষ্ঠানিক গবেষণা, পরস্পরের মধ্যে মতবিনিময় করে সমস্যার সমাধান করেন। অনেক কিছু আবিষ্কার করেন। এজন্য জ্ঞানী কৃষকদের প্রাকৃতিক কৃষি বিজ্ঞানী বলে । অে অনেক কৃষক সারা জীবন কৃষি কাজে নিয়োজিত থেকে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। অভিজ্ঞ কৃষকদের কাছ থেকে অনেক কৃষক জ্ঞান ও তথ্য নিয়ে উপকৃত হন। অভিজ্ঞ কৃষকদের মাধ্যমে কৃষির তথ্য ও সেবা পাচ্ছেন এমন কয়েকজনের অভিজ্ঞতা এখানে আলোকপাত করা হলো :

চৌদ্দ শতকে খনা নামের এক মহিলা কৃষকের রচিত কৃষি বিষয়ক উপদেশমূলক বচন দ্বারা আজও কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। খনা ফসল, মাছ, পশুপাখি পালন, বৃক্ষরোপণসহ কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উপদেশমূলক বাক্য বলেছেন। এসব বাক্য মেনে চললে উপকার পাওয়া যায়। সহস্রাধিক খনার বচন রয়েছে । কিছু উল্লেখযোগ্য বচন এখানে উল্লেখ করা হলো :

  1. “আষাঢ় মাসে বান্ধে আইল, তবে খায় বহু শাইল’
  2. শোন শোন চাষি ভাই, সার না দিলে ফলন নাই’
  3. ‘গাছ গাছালি ঘন রোবে না, গাছ হবে তাতে ফল হবে না’
  4. যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্য রাজার পুণ্য দেশ’
  5. যদি বর্ষে আগুনে, রাজা যায় মাগুনে।’
টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার শালিয়াবহ গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ। তাঁর আট একর জমি বিভিন্ন রকম ফল গাছ, ভেষজ গাছ, ফসলসহ প্রাকৃতিক উপাদানে ভরা। নিজে এগুলো চাষ করে প্রচুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। নিজের অভিজ্ঞতায় তিনি একবার ইউরিয়া সার সাশ্রয়ের জন্য আনারস ক্ষেতে তরল ইউরিয়া স্প্রে করে সারাদেশে কৃষিবিদ ও কৃষি বিজ্ঞানীদের মাঝে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান যে, ইউরিয়া স্প্রে কিছু ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত। অনেক কৃষক কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে তার কাছ থেকে জ্ঞান ও তথ্য নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন। 

ঝিনাইদহে হরিপদ কাপালী নামের এক বৃদ্ধ কৃষক প্রাকৃতিকভাবে বাছাই করে এক ধানের জাত উদ্ভাবন করেন। ধানের নাম দেয়া হয় হরিধান বিষয়টি সারা দেশে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। নাটোরের খোলাবাড়িয়া গ্রামের আফাজ পাগলা ভেষজ গাছের চাষাবাদ করে অভিজ্ঞ হয়েছেন। ঐ গ্রামের প্রায় সবাই তার কাছ থেকে জ্ঞান ও তথ্য নিয়ে ভেষজ গাছের চাষ করছে। গ্রামটির নাম দেয়া হয়েছে ‘ঔষুধি গ্রাম’ ।

রাজশাহীর মঞ্জুর স্ট্রবেরি, ফেনীর সাজু উকিল মাছ, পাবনার বাদশা পেঁপে, পাবনার ময়েজ কুল, যশোরের আইয়ুব সবৃজি, পাবনার জাহিদ গাজর, পাবনার কেতাব মন্ডল লিচু, সিলেটের জমির টমেটো, সিলেটের সেলিম দেশীজাতের ধান, আজাদ হাইব্রিড সুগন্ধী ধান, বাবলা কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, রাজবাড়ির আবদুল কাদের রঙ্গিন সাগরকলা ও শেরপুরের রফিকুল ভুট্টা চাষ করে সফল কৃষিজীবী সুনাম অর্জন, করেছেন। এরকম হাজারো অভিজ্ঞ কৃষক এদেশের প্রত্যন্ত গ্রামের আনাচে কানাচে রয়েছে। যাদের কাছ থেকে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। তাদের কাছে রয়েছে কৃষি জ্ঞানের ভান্ডার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *